حدثني عثمان بن محمد، قال : قال لي عبيدالله بن يحيي، حدثني عثمان بن سوادة بن عباد، عن حفص بن ميسرة، عن زيد بن اسلم، عن عبدالله بن عمر، قال : «كنا مع رسول الله صلي الله عليه وسلم بمكة نرفع ايدينا في بدء الصلوة وفي داخل الصلوة عند الركوع فلما هاجر النبي صلي الله عليه وسلم الي المدينة ترك رفع يدين في داخل الصلوة عند الركوع وثبت علي رفع يدين في بدء الصلوة.»
=> হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মক্কায় থাকাকালীন নামাযের শুরুতে এবং রুকুর করার সময় রাফউল ইয়াদাঈন করতাম। অতঃপর নবীজি যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তখন নামাযের মধ্যে রুকু করার সময় রাফউল ইয়াদাঈন করা পরিত্যাগ করেন এবং (শুধুমাত্র) নামাযের শুরুতে রাফউল ইয়াদাঈন বহাল রেখে দেন।" {আখবারুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিছীন, পৃষ্ঠা নং ২১৪, সনদ সহীহ}
নবী করিম ﷺ এর আদেশ : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
أخبرنا محمد بن عمر بن يوسف، قال : حدثنا بشر بن خالد العسكري، قال : حدثنا محمد بن جعفر، عن شعبة، عن سليمان، قال : سمعت المسيب بن رافع، عن تميم بن طرفة، عن جابر بن سمرۃ رضی اللہ عنہما، عن النبی صلی اللہ علیہ و سلم، انه دخل المسجد فابصر قوما قد رفعوا ايديهم، فقال : «قد رفعوها كانها اذناب خيل شمس أسكنوا في الصلاة.»
=» হযরত জাবির ইবনে সামুরাহের সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন মসজিদে প্রবেশ করে লোকদেরকে রাফউল ইয়াদাঈন করতে দেখেন। তাই তিনি বললেনঃ- তারা নিজেদের হাতকে চঞ্চল ঘোড়ার লেজের মতো উঠিয়েছে। নামাযের মধ্যে স্থির থাকো। [ইবনে হিব্বান, ৩/১৭৮, সনদ সহীহ]
নবীজির সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মতের আমল ছিল তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حَدَّثَنَا أَبُو عُثْمَانَ سَعِيدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَحْمَدَ الْحَنَّاطُ، وَعَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عِيسَى بْنِ أَبِي حَيَّةَ، قَالَا : نا إِسْحَاقُ بْنُ أَبِي إِسْرَائِيلَ، نا مُحَمَّدُ بْنُ جَابِرٍ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ : «صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَ أَبِي بَكْرٍ وَمَعَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فَلَمْ يَرْفَعُوا أَيْدِيَهُمْ إِلَّا عِنْدَ التَّكْبِيرَةِ الْأُولَى فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ.»
=> হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, হযরত আবু বকর ও উমরের সাথে নামায পড়েছি। তাঁরা তাকবীরে তাহরিমা ছাড়া আর কোথাও রাফউল ইয়াদাঈন করতেন না।” (সুনানে দারাকুতনী, ২/৫৪, সনদ হাসান)
মহানবীর প্রিয় শ্বশুরের আমল ছিল তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ إبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ : «صَلَّيْت مَعَ عُمَرَ فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلاَتِهِ إِلاَّ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلاَةَ.»
=» হযরত আসওয়াদ ইবনুল ইয়াযীদ নাখাঈ রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- আমি হযরত উমরের সঙ্গে নামায পড়েছি, তিনি শুধু নামায শুরু করার সময় রাফউল ইয়াদাঈন করতেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ২৪৬৯, সনদ সহীহ}
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রিয় জামাতার আমল : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
فَإِنَّ أَبَا بَكْرَةَ قَدْ حَدَّثَنَا قَالَ : ثنا أَبُو أَحْمَدَ، قَالَ : ثنا أَبُو بَكْرٍ النَّهْشَلِيُّ، قَالَ : ثنا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ : «أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي أَوَّلِ تَكْبِيرَةٍ مِنَ الصَّلَاةِ , ثُمَّ لَا يَرْفَعُ بَعْدُ.»
=> কুলাইব ইবনে শিহাবের সূত্রে বর্ণিত। হযরত আলী (রাঃ) প্রথম তাকবীরের সময় রাফউল ইয়াদাঈন করতেন, এরপর আর কোথাও করতেন না।" [তাহাবি শরীফ, হাদিস ১২৫৯, সনদ সহীহ]
মহানবীর সার্বক্ষণিক সহচরের আমল ছিল তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ : قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ : «أَلاَ أُصَلِّي بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم؟» فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ.
=» ইবনে মাসউদ রা. একদিন উপস্থিত লোকদের বললেনঃ- আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহর নামাযের মত নামায পড়ব? এরপর তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে প্রথমবার (তাকবীরে তাহরিমা) ব্যতীত অন্য কোন সময় রাফউল ইয়াদাঈন করেননি। {তিরমিযী শরীফ, ১/৩৫, সনদ সহীহ}
আহলে ঈলমের অবস্থান : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
قَالَ أَبُو عِيسَى : «حَدِيثُ ابْنِ مَسْعُودٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ. وَبِهِ يَقُولُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالتَّابِعِينَ. وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَأَهْلِ الْكُوفَةِ.»
=» ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন, “হযরত ইবনে মাসউদের (তরকে রাফউল ইয়াদাঈন সংক্রান্ত) হাদীছ হাসান{-সহীহ} পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ঈলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষণ করতেন। সুফিয়ান ছাওরী (রাহি.) ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।” [প্রাগুক্ত]
আছহাবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ওয়া আলী রা. এর প্রামাণ্য আমল : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو أُسَامَةَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ : «كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ، وَأَصْحَابُ عَلِيٍّ، لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ فِي افْتِتَاحِ الصَّلاَةِ.» قَالَ وَكِيعٌ : «ثُمَّ لاَ يَعُودُونَ.»
=» আবু ইসহাক সাবিয়ী বলেনঃ- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও হযরত আলীর শাগরিদগণ শুধু নামাযের শুরুতে রাফউল ইয়াদাঈন করতেন।
ওয়াকী (রাহি.) বলেন, "অতঃপর আর করতেন না।" [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিছ নম্বর ২৪৬১, সনদ সহীহ]
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণে সর্বাধিক তৎপর সাহাবীর আমল : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ : «مَا رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَا يَفْتَتِحُ.»
=> হযরত মুজাহিদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি ইবনে উমর রা. কে নামাযে প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য কোন সময় রাফউল ইয়াদাঈন করতে দেখিনি।” [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হা. ২৪৫২, সনদ সহীহ]
সর্বাধিক হাদীছ বর্ণনাকারী সাহাবীর আমল ছিল তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حَدَّثَنَا أَبُو مُصْعَبٍ، قَالَ : حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنْ نُعَيْمِ بْنِ الْمُجْمِرِ، وَأَبِي جَعْفَرٍ الْقَارِيِّ، أَنَّهُمَا أَخْبَرَاهُ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ كَانَ يُصَلِّي لَهُمْ ، فَيُكَبِّرُ كُلَّمَا خَفَضَ وَرَفَعَ ، وَكَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِِ حِينَ يُكَبِّرُ يَفْتَتِحُ الصَّلاَةَ.
=» নুয়াইম ইবনে মুজমির এবং হযরত আবু জা'ফর ক্বরী রহঃ এর সূত্রে বর্ণিত। হযরত আবু হুরায়রা নামায পড়াতেন, প্রত্যেকবার উঁচু-নিচু হওয়ার সময় তাকবীর বলতেন এবং তাকবীরে তাহরিমার সময় রাফউল ইয়াদাঈন করতেন। (মুয়াত্তা, ১/৮১, সনদ সহীহ)
বদরি সাহাবীদের অমর স্বাক্ষ্য : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
মুহাম্মদ (রাহি.) লিখেছেনঃ- جَاءَ الثبت عَن عَليّ بن ابي طَالب وَعبد الله بن مَسْعُود، أنهما لَا يرفعان فِي شَيْء من ذَلِك إلا فِي تَكْبِيرَة الِافْتِتَاح، فعلي ابْن ابي طَالب وَعبد الله بن مَسْعُود كَانَا أعْلَم برَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ واله وَسلم من عبد الله عمر، لِأَنَّهُ قد بلغنَا أَن رَسُول الله وَسلم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ : إذا أقيمت الصَّلَاة فليلني مِنْكُم أولو الاحلام والنهى ثمَّ الَّذين يَلُونَهُمْ ثمَّ الَّذين يَلُونَهُمْ، فَلَا نرى أن أحدا كَانَ يتَقَدَّم على أهل بدر مَعَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وآله وَسلم إذا صلى، فنرى أن أصحاب الصَّفّ الأول وَالثَّانِي أهل بدر وَمن أشبههم فِي مَسْجِد الْمُسلمين، وأن عبد الله بن عمر رَضِي الله عَنْهُمَا ودونه من فتيانهم خلف ذَلِك فنرى عليا وَابْن مَسْعُود رَضِي الله عَنْهُمَا وَمن اشبههما من أهل بدر أعْلَم بِصَلَاة رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ واله وَسلم، لأنهم كَانُوا أقْرب إليه من غَيرهم وأنهما أعرف بِمَا ياتي من ذَلِك وَمَا يدع.
=> আলী ইবনে আবী তালিব ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে নির্ভরযোগ্য খবর এসেছে যে, তাঁরা নামাযে তাকবীরে তাহরিমা ছাড়া আর কোথাও রাফউল ইয়াদাঈন করতেন না। আর তাঁরা দু'জনই মহানবী সম্পর্কে ইবনে উমর রা. এর চেয়ে বেশি অবগত ছিলেন। আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহর এই ইরশাদ পৌঁছেছে যে, “তোমাদের মধ্যে যারা অধিক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তারা আমার কাছে দাঁড়াবে। এরপর যারা তাদের পরের স্তরের, এরপর যারা তাদের পরের স্তরের।”
↑↓
এজন্য আমরা মনে করি না যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর সঙ্গে নামাযে অন্য কেউ বদরি সাহাবীদের চেয়ে অগ্রবর্তী হতেন। আমরা বরং মনে করি যে, মুসলমানদের মসজিদে প্রথম ও দ্বিতীয় কাতারে ছিলেন আহলে বদর ও তাঁদের সমপর্যায়ের সাহাবীগণ। আর হযরত ইবনে উমর ও যুবক সাহাবীগণ দাঁড়াতেন এর পিছনে।
↑↓
সুতরাং, আমরা মনে করি আলী রা., আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তাঁদের অনুরূপ অন্যান্য বদরি সাহাবীগণ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর নামায সম্পর্কে অধিক অবগত ছিলেন। কারণ তাঁরা অন্যদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ছিলেন এবং তিনি কি করতেন আর কি করতেন না, সেটা বেশি বুঝতেন। {কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা, ১/৯৪-৯৫}
কুফাবাসী সাহাবায়ে কেরামের অবিরত কর্মধারা ছিল তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حدثنا أحمد بن داود، قال : ثنا مسدد، قال : ثنا خالد بن عبد الله، قال : ثنا حصين، عن عمرو بن مرة، قال : «دخلت مسجد حضرموت فإذا علقمة بن وائل يحدث عن أبيه : أن رسول الله - عليه السلام - كان يرفع يديه قبل الركوع وبعده. فذكرت ذلك لإبراهيم، فغضب وقال : رآه هو ولم يره ابن مسعود ولا أصحابه؟!»
=> হযরত আমর ইবনে মুররা (রাহি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- আমি একবার “হাযরা মাউত”-এর মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম যে, হযরত আলকামা ইবন ওয়াইল তাঁর পিতা থেকে হাদিছ বর্ণনা করছেন - "রাসূলুল্লাহ ﷺ রুকুর পূর্বে ও পরে রাফউল ইয়াদাঈন করতেন"। আমি বিষয়টি ইবরাহীম নাখাঈর নিকট উল্লেখ করলে, তিনি রাগান্বিত হয়ে পড়লেন এবং বললেনঃ- হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) মহানবীকে দেখেছেন, আর ইবন মাসউদ রা. ও অন্য সাহাবীগণ তাঁকে দেখেননি? (তাহাবি শরীফ, ১/৪২৫, সনদ সহীহ)
আহলে মক্কার নিরবচ্ছিন্ন আমল : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ أَبِي هُبَيْرَةَ، عَنْ مَيْمُونٍ الْمَكِّيِّ، أَنَّهُ رَأَى عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَصَلَّى بِهِمْ يُشِيرُ بِكَفَّيْهِ حِينَ يَقُومُ وَحِينَ يَرْكَعُ وَحِينَ يَسْجُدُ وَحِينَ يَنْهَضُ لِلْقِيَامِ فَيَقُومُ فَيُشِيرُ بِيَدَيْهِ فَانْطَلَقْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقُلْتُ إِنِّي رَأَيْتُ ابْنَ الزُّبَيْرِ صَلَّى صَلاَةً لَمْ أَرَ أَحَدًا يُصَلِّيهَا فَوَصَفْتُ لَهُ هَذِهِ الإِشَارَةَ فَقَالَ إِنْ أَحْبَبْتَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَى صَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاقْتَدِ بِصَلاَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ.
=» মায়মূন মাক্কীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রাঃ) কে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়তে দেখলাম। তিনি দাঁড়ানোর সময়, রুকু হতে সোজা হওয়ার সময়, সিজদার সময় এবং {সিজদা শেষে} দাঁড়ানোর সময় রাফউল ইয়াদাঈন করলেন।
↑↓
অতঃপর আমি হযরত ইবনে আব্বাসের কাছে গিয়ে, তাকে ইবনে যুবায়র রা. এর নামায সম্পর্কে বললামঃ- কাউকে তো এভাবে রাফউল ইয়াদাঈন করে নামায পড়তে দেখিনি।” তখন তিনি বললেন, "তুমি রাসূলুল্লাহর নামাযের পদ্ধতি অবলোকন করতে চাইলে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রাঃ) এর নামাযের অনুসরণ কর।" [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩৯, রিজাল ছিক্বাহ]
মদিনা মুনাওয়ারায় প্রচলিত আমল ছিল তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
আল্লামা ইবনে রুশদ লিখেছেনঃ- فمنهم من اقتصر به على الإخرام فقط ترجيحا لحديث عبد الله بن مسعود، وحديث البراء بن عازب وهو مذهب مالك لموافقة العمل به.
=> তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইবনে মাসউদ রা. এবং বারা ইবনে আযিবের হাদিসকে প্রাধান্য দিয়ে শুধু তাকবীরে তাহরিমার সময় রাফউল ইয়াদাঈন করতেন। মদিনাবাসীদের আমল অনুযায়ী, এটাই ইমাম মালিক রহঃ এর মাযহাব। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ, ১/১৪৩)
ইমাম মালিকের চিরচেনা আমল : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
قَالَ مَالِكٌ : «لَا أَعْرِفُ رَفْعَ الْيَدَيْنِ فِي شَيْءٍ مِنْ تَكْبِيرِ الصَّلَاةِ لَا فِي خَفْضٍ وَلَا فِي رَفْعٍ إلَّا فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ.»
=» মালিক (রাহি.) বলেন, “নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন তাকবীরের সময় / ঝোঁকার সময় / সোজা হওয়ার সময় রাফউল ইয়াদাঈন করার কথা আমার জানা নেই।” {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ১/১৬৫}
ফিকহে মালেকীর শক্তিশালী অভিমত হলো তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
قَالَ ابْنُ الْقَاسِمِ : «وَكَانَ رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ مَالِكٍ ضَعِيفًا إلَّا فِي تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ.»
=> ইবনুল কাসিম বলেনঃ- ইমাম মালিক রহঃ নামাযের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফউল ইয়াদাঈন করার পদ্ধতিকে [দলীলের বিবেচনায়] দুর্বল মনে করতেন। (প্রাগুক্ত)
হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ফতোয়া হচ্ছে তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
قَالَ مُحَمَّدٌ : «السُّنَّةُ أَنْ يُكَبِّرَ الرَّجُلُ فِي صَلاتِهِ كُلَّمَا خَفَضَ وَكُلَّمَا رَفَعَ، وَإِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُودِ كَبَّرَ، وَإِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُودِ الثَّانِي كَبَّرَ.
فَأَمَّا رَفْعُ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلاةِ فَإِنَّهُ يَرْفَعُ الْيَدَيْنِ حَذْوَ الأُذُنَيْنِ فِي ابْتِدَاءِ الصَّلاةِ مَرَّةً وَاحِدَةً، ثُمَّ لا يَرْفَعُ فِي شَيْءٍ مِنَ الصَّلاةِ بَعْدَ ذَلِكَ، وَهَذَا كُلُّهُ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَفِي ذَلِكَ آثَارٌ كَثِيرَةٌ.»
=> মুহাম্মাদ (রাহি.) বলেনঃ- নামাযে প্রতিবার ঝোঁকা ও সোজা হওয়া এবং উভয় সিজদায় যাবার সময় ও উঠার সময় তাকবীর বলা সুন্নাত।
কিন্তু রাফউল ইয়াদাঈন শুধু একবার / নামায শুরু করার সময় / তাকবীরে তাহরিমার সময়। এছাড়া নামাযে আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করবে না। এ সবই আবু হানিফার অভিমত। এর সমর্থনে প্রচুর সংখ্যক হাদিস রয়েছে। [মুয়াত্তা, পৃঃ ৫৮]
ফুকাহায়ে কেরামের ইজতিহাদ : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي دَاوُدَ، قَالَ : ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، قَالَ: ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالَ : «مَا رَأَيْتُ فَقِيهًا قَطُّ يَفْعَلُهُ، يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي غَيْرِ التَّكْبِيرَةِ الْأُولَى.»
=» ইমাম আবু বকর ইবনে আইয়াশ বলেন, "আমি কোন ফকীহকে কখনও প্রথম তাকবীর ব্যতীত রাফউল ইয়াদাঈন করতে দেখিনি।" {তাহাবি শরীফ, ১/৪৩১, সনদ সহীহ}
দ্বীনে ইসলামের অগ্রগণ্য মত হলো তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
ইবনে বাত্তাল বলেনঃ- غير أنه يرجح القول بفعل الخليفتين بعد النبي عليه السلام، عمر وعلي بن أبي طالب. وإن كان قد اختلف فيه عن على، فلم يختلف فيه عن عمر.
=> রাসূলে কারীম ﷺ এর পরে তাঁর দুই খলীফা, হযরত উমর ও আলী রা. এর আমল দ্বারা তরকে রাফউল ইয়াদাঈনের অভিমতটি অগ্রগণ্যতা লাভ করে। এই ব্যাপারে আলী ইবনে আবী তালিব থেকে দু'রকম বর্ণনা পাওয়া গেলেও, হযরত উমর (রাঃ) থেকে ভিন্ন কোনো বর্ণনা নেই। (শরহে সহীহ বুখারী, ২/৩৫৫)
মুসলিম বিশ্বে মুতাওয়াতির আমল : তরকে রাফউল ইয়াদাঈন
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত হানাফী এবং মালিকী মাযহাবের অনুসারীগণ প্রথম থেকেই নামাযে তরকে রাফউল ইয়াদাঈনের প্রবক্তা। আলহামদুলিল্লাহ, তাদের মোট সংখ্যা মুসলমানদের দুই-তৃতীয়াংশের সমান।
এর বিপরীতে, ফিতনাবাজ শি'আ / আহলে হাদিছ ফিরকা রাফউল ইয়াদাঈন করার পক্ষে [অত্যধিক গোঁড়ামি প্রদর্শনপূর্বক] বাড়াবাড়ি করে।
আহলে সুন্নাতের শাফেঈ এবং হাম্বলী-গণও তাকবীরে তাহরিমা ছাড়াও রুকুর আগে / পরে / তৃতীয় রাকাতের শুরুতে রাফউল ইয়াদাঈন করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হোন। {আমীন}
0 Comments