Header Ads Widget

Responsive Advertisement

হাদীসের জগতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহু:

হাদীসের জগতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহু: 


লেখকঃ আল্লামা ডক্টর Harun Azizi নদভী


সাবেক আমিরে হেফাজত, কায়েদে মিল্লাত, শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. উম্মতের এমন এক ব্যক্তি যাঁকে শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ স্মরণ করবে। কারণ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর কালজয়ী অবদান অবিস্মরণীয়। তালীম-তারবিয়াত, ওয়াজ-নসীহত, ইবাদত-বন্দেগী, লেখা-পড়া, তাসনীফ-তালীফ, গবেষণা-অধ্যয়ন, ইসলামের খেদমত ও মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ, মুসলিম জাতির ইসলামী মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা ও ঈমান-আকীদা রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দান, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ায় ইসলামী দাওয়াতের প্রচার-প্রসার এবং উম্মতের ভবিষ্যৎ রাহবরীর জন্য যোগ্য ব্যক্তি গঠনের মহান কাজ ইত্যাদি সব ময়দানে তাঁর পদচারণা রয়েছে। বরং এসব বিষয়ে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাই এদেশের জনগন তাঁকে অত্যন্ত ভালো বাসেন। যা তাঁর জানাযায় দেশের আনাচ-কানাচ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় প্রমাণ করেছে।


ইলমি জগতে আল্লামা বাবুনগরীর খেদমাত অনেক। দ্বীনি ইলম ও শাস্ত্রগুলোর মধ্যে তাঁর কাছে সব চেয়ে বেশি প্রিয় ছিল হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলামী সাহিত্য ও ইতিহাস।


হাদীসের শিক্ষাগ্রহণ


তিনি দেশ বিদেশের বড় বড় মুহাদ্দিসগণের কাছে হাদীসে নববীর শিক্ষা লাভ করেছেন। হাদীস বিষয়ে তাঁর পড়া-শুনা শুরু হয় উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায়। সেখানে তিনি মিশকাত এবং দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। তারপর হাদীসের বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সফর করেন। সেখানে আল্লামা বান্নূরী টাউন করাচীতে অবস্থিত ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া’য় উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ ‘তাখাচ্চুছ ফিল হাদীসে’ ভর্তি হয়ে ২ বছর যাবত হাদীস, রেজালে হাদীস, উলূমে হাদীস ইত্যাদি বিষয়ে গভীর গবেষনা ও অর্ধয়নে রত থাকেন। প্রায় ২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত আরবী ভাষায় লিখিত ‘আত তারীফ বিশুয়ূখিদ্দারিমী’ নামক একটি গবেষণা অভিসন্দর্ভ জমা করে তিনি হাদীস বিষয়ে উচ্চ ড়িগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন।


দারুল উলুম হাটহাজারীতে তাঁর হাদীসের উস্তাদগণ


দারুল উলুম হাটহাজারীতে তাঁর হাদীসের উস্তাদগণের মধ্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল কায়্যুম রহ, মুফতিয়ে আজম আল্লামা আহমাদুল হক রহ, শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল আজীজ রহ, তাঁর পিতা মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তানযীমুল আশতাত’ এর লেখক শায়খুত তাফসীর আল্লামা আবুল হাসান রহ, আল্লামা হামেদ রহ, মিশকাত শরীফের আরবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মিরআতুল আমালীহ’ এর লেখক আল্লামা মুহাম্মদ আলী মিরসরাঈ রহ প্রমুখ। এরা সবাই অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষন, খ্যাতিমান মুহাদ্দিস এবং যুগের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ। অনেকে হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচয়িতা, যা সারা বিশে^ পঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে তাঁর পিতা শায়খুত তাফসীর আল্লামা আবুল হাসান রহ, লিখিত মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ দেশ বিদেশে শিক্ষক শিক্ষার্থী সবার কাছে সমানভাবে সমাদৃত। সবাই এই কিতাব থেকে অনেক অনেক বেশি উপকৃত হচ্ছেন।


হাদীস বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সফর


মূলতঃ তিনি যখন দাওরায়ে হাদীস পড়ছিলেন তখন হাদীসের কিতাবসমূহের বড় বড় আরবী ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করতেন। বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’, ‘উমদাতুল কারী’ এবং ‘ফয়জুল বারী’, মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল মিনহাজ’, ‘ফাতহুল মুলহিম’, আবুদাউদ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘বজলুল মাজহুদ’, ‘আনওয়ারুল মাহমুদ’ ‘আউনুল মাবূদ’, তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’, ‘আল আরফুশশডযী’, ‘মাআরিফুস সুনান’ সহ ‘নাসাঈ শরীফ’ ও ‘ইবনে মাজাহ’ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহ মুতালাআয় রাখতেন। বিশেষ করে মুহাদ্দিসুল আসর আল্লামা ইউসুফ বান্নুরী রহ, লিখিত তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মাআরিফুস সুনান’ কিতাবের দিকে তিনি বেশি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রায় এই কিতাব টা দেখতেন এবং তার থেকে উপকৃত হতেন। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি যেন এই কিতাবের আশেক হয়ে গেলেন। তখন ইমামুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ. এর বিশেষ শীষ্য আল্লামা ইউসুফ বান্নূরী রহ. জীবিত ছিলেন। তখন তিনি সময়কে মূল্যায়ন করে দ্রুত আল্লামার কাছে পৌঁছাকে গনিমত মনে করলেন যেন আসল লেখকের কাছে গিয়ে হাদীসের জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।


আল্লামা ইউসুফ বান্নুরী রহ. এর সান্নিধ্যে


এভাবে তিনি ১৯৭৬ সালে হাদীসের বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে সুদুর করাচীতে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, তিরমিযী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মাআরিফুস সুনান’ এর সুযোগ্য লেখক আল্লামা ইউসুফ বান্নূরী রহ. এর কাছে পৌঁছে গেলেন। সেখানে তিনি ‘তাখাচ্চুছ ফিল হাদীস’ বিভাগে ভর্তি হলেন এবং খুব কাছে থেকে আল্লামা ইউসুফ বান্নুরী রহ. থেকে ইলমে হাদীসের জ্ঞান আহরন করতে লাগলেন। আল্লামা বান্নুরী রহ. থেকে সরাসরী পড়ার উদ্দেশ্যে বুখারী শরীফ সম্পূর্ণ পুনরায় পড়লেন। আল্লামা বান্নুরীর দরসে বুখারীর বৈশিষ্ট ও নিয়ম-পদ্ধতি নিয়ে যখন কথা বলতেন তখন মনে হত আমরা যেন ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, বান্নুরী টাউন, করাচীতে পৌঁছে গেছি আর আল্লামা বান্নুরী যেন আমাদের সামনে উপস্থিত। তিনি আল্লামা বান্নুরীর এতই ভক্ত ছিলেন যে প্রত্যেক মজলিসে তিনি বান্নূরী রহ, এর কোন না কোন কথা অবশ্যই বলতেন। বাংলাদেশের আরবী সাহিত্যের কিংবদন্তি আলেম, বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ, আরেফে রাব্বানী শায়খ হারুন বাবুনগরী রহ. এর বিশেষ শীষ্য ও খলীফা আল্লামা সুলতান যওক নদভী (দা: বা:) বলেছেনঃ ‘মাওলানা জুনায়েদ সাহেব আমার শাগরিদ হলেও তিনি আল্লামা ইউসুফ বান্নুরীর শীষ্যত্ব অর্জন করে বর্তমানে আমাকেও চাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বরং সারা এশিয়াতে বর্তমানে তাঁর মত মুহাক্কিক মুহাদ্দিস বা হাদীস বিশারদ আর নেই’। তাই আমরা বলতে চাই তিনি ছিলেন বাংলার দ্বিতীয় বান্নূরী।


আল্লামা বান্নুরী টাউন করাচীতে তাঁর অন্যান্য উস্তাদগণ

বান্নুরী টাউন করাচীতে আল্লামা বান্নূরী রহ. ব্যতীত আরো যাদের কাছে তিনি হাদীসের জ্ঞান অর্জন করেছেন তারা হলেন- বিশিষ্ট হাদীস গবেষক আল্লামা আব্দুররশীদ নূমানী রহ., আল্লামা ইদ্রিস মীরাঠী, মুফতি ওলী হাসান টোঙ্কী রহ. প্রমুখ। উস্তাদগণের আলোচনা এবং প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ থাকতেন। এক এক উস্তাদের এক এক বৈশিষ্ট এবং অনেক গুনাবলী ও বিভিন্ন ঘটনা বলতেন। অনেক সময় দীর্ঘ রাত পর্যন্ত তাঁদের আলোচনা করতেন। মনে হত যেন তিনি বিশেষ স্বাদ পাচ্ছেন। আল্লামা ইদ্রিস মীরাঠী ছিলেন তাঁর থিসিস এর তত্ত্বাবধায়ক। নিজের উস্তাদ ছাড়াও যাদের সাথে ইলমী সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তাদের মধ্যে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কাশফুল বারী’র লেখক শায়খুল হাদীস আল্লামা সলীমুল্লাহ খান রহ., ‘কাশফুনুনিকাব আম্মা ইয়াকুলুহুত তিরমিযী ওয়া ফিল বাব’ এর লেখক আল্লামা ড. হাবীবুল্লাহ মুখতার রহ., ‘তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম’, ‘দরসে তিরমিযী’ ও ‘তাওযীহুল কুরআন’ সহ বহু গ্রন্থ প্রনেতা শায়খুল ইসলাম আল্লামা তকী উসমানী এবং আল্লামা আব্দুররজ্জাক ইসকান্দর রহ. প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য।


আল্লামা আব্দুররশীদ নূমানীর শীষ্যত্ব লাভ


আল্লামা আব্দুররশীদ নূমানী রহ. ছিলেন এই সফরে তাঁর দ্বিতীয় ব্যক্তি যাঁর থেকে তিনি বেশি বেশি ইস্তেফাদা করেছেন। আল্লামা নূমানী আসলে বড় মাপের একজন গবেষক আলেম ছিলেন। তিনি ‘আল ইমাম ইবনে মাজাহ ওয়া কিতাবুহু আসসুনান’ (মা তামুসসু ইলাইহিল হাজাহ লিমান ইউতালিউ সুনানা ইবনে মাজাহ) নামে ইমাম ইবনে মাজাহ রহ. এবং তাঁর কিতাব সম্পর্কে অত্যন্ত গবেষণাধর্মী একটি কিতাব লিখেছেন। দেশে ফেরার পরও তাঁর সাথে যোগাযোগ ছিল। মাঝে মধ্যে তিনি চিঠি লেখতেন। একদা আমার মাধ্যমে একটি চিঠি লেখালেন। হযরত বলতেছিলেন আর আমি লিখতেছিলাম। সেই চিঠিতে হযরত নিজের জন্য এবং আমার নাম দিয়ে আমার জন্যেও বিশেষভাবে হাদীসের এজাযত চাইলেন। তখন আমি হুজুরের তত্ত্বাবধানে জামিয়া বাবুনগরে ‘তাখাচ্চুচ ফিল হাদীস’ এর ছাত্র ছিলাম। কিছু দিন পর আল্লামা নূমানী রহ. এর পক্ষ থেকে উত্তর আসল। হুজুর আমাকে ডেকে উত্তরটি পড়তে দিলেন। আমি তা পড়ে শুনালাম। তথায় তিনি নিজের যোগ্য শাগরিদকে হাদীসে তাঁর সকল মরবিয়্যাতের ইজাযত দিলেন। সাথে তাঁর শাগরিদের শাগরিদ আমি অধমকেও তাঁর (আল্লামা নূমানীর) হাদীসের সকল মরবিয়্যাতের ইজাযত দিলেন। আমি যার নেই শেষ খুশী হলাম। সাথে সাথে তিনি নিজের যোগ্য শাগরিদকে একটি দায়িত্বও দিলেন। তা হলো, হাদীসের দৃষ্টিতে হানাফী মাযহাবের দলীলগুলো যেন একত্রিত করা হয় এবং কিতাবটি যেন হাফেজ ইবনে হাজর রহ. এর ‘বুলুগুল মারাম’ এর নিয়মে লিপিবদ্ধ করা হয়। তিনি একটি নামও দিলেন। তা হলো, ‘নাইলুল মারাম ফি আহাদীসিল আহকাম’। হুজুর আমাকে বললেন এই কিতাবটি তুমি লিখে দাও। আমি বিভিন্ন ব্যস্থতার কারণে কাজটি করতে পারিনি। অবশ্যই বাহরাইন থাকাবস্থায় কিছু কাজ করেছি। হাই আফসোস! হুজুরকে তো হারিয়ে ফেললাম। এখন উস্তাদের আদেশ রক্ষার্থে যথাদ্রুত পারি কাজটি করার আশা করছি। আল্লাহ তাআলার কাছে তৌফিক চাচ্ছি এবং আপনাদের কাছে দোয়া কামনা করছি।


 জামিয়া বাবুনগরে হাদীসের খেদমত


পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর তাঁর নানা আরেফে রাব্বানী শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী রহ. এর আগ্রহ ও আদেশে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলূম, বাবুনগর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম’ এ হাদীসের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি একাধারে অনেক বছর পর্যন্ত ইলমে দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন শাস্ত্রের বিভিন্ন কিতাবের দরস দান করেছেন। জামিয়া বাবুনগরে তাঁর খেদমাত অনেক ব্যাপক।


যে সকল হাদীসগ্রন্থের দরস দান করেছেন


এখানে তিনি পুরাপুরী দক্ষতা ও যোগ্যতার সহিত হাদীসের যে সকল কিতাবের দরস দান করেছেন সেগুলি হলো- ১. মুসলিম শরীফ, ২. আবুদাউদ শরীফ, ৩. শরহু মাআনিল আসার (তাহাবী শরীফ), ৪. মিশকাত শরীফ সানী, ৫. মুসনাদুল ইমামিল আজম আবিহানীফা ইত্যাদি। হাদীসের দরসে তিনি ছিলেন অনন্য।


দরসে হাদীসের ধরণ ও পদ্ধতি


তাঁর হাদীস পড়ানোর নিয়মটা শুধুমাত্র অনুবাদ এবং হানাফী-শাফেয়ী এখতেলাফের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং যুগের চাহিদামত হাদীসের ব্যাখ্যা করতেন এবং সমসাময়ীক সমস্যার সমাধান হাদীসের মাধ্যমে খোজার চেষ্টা করতেন। মুজতাহিদ ইমামগণের কথা যথাযত মর্যাদার সাথে বলতেন। মাজহাবী সংকীর্ণতা থেকে উর্ধে থাকার চেষ্টা করতেন। হাদীস থেকে কি শিক্ষা পেলাম তা বিশেষভাবে তুলে ধরতেন। হাদীসের সনদ এবং রেজালের অনেক আলোচনা তাঁর দরসে থাকত। বছরের শুরুতে হাদীস, ইলমে হাদীস, হাদীসের পরিভাষাসমূহ, তাবকাতে কুতুবে হাদীস, হাদীসের হেফাজত, হাদীস সংকলনের ইতিহাস, ফিতনায়ে ইনকারে হাদীস, ফিতনায়ে ওয়াজয়ে হাদীস (জাল হাদীসের ফিতনা), ভারত বর্ষে ইলমে হাদীস এবং বাংলাদেশে ইলমে হাদীস ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রাখতেন।


তাঁর চিন্তা ছিল মুহাদ্দিসগণ যেন সিহাহ সিত্তার কিতাবগুলু বিভিন্ন অধ্যায় থেকে পড়ানো শুরু হয়, যেন ছাত্ররা সব বিষয়ের তাকরীর শুনতে পারে। সবাই একই সাথে ‘কিতাবুত তাহারাত’ বা ‘কিতাবুল ঈমান’ পড়ালে ছাত্ররা একই কথা সকল উস্তাদ থেকে শুনে। ফলে শেষের দিকে অনেক গুলো বিষয়ে কোন তাকরীরই শুনার সুযোগ হয় না। আমরা যখন হুজুরের কাছে ‘আবুদাউদ’ শরীফ পড়ছিলাম তখন তিনি আমাদেরকে ‘কিতাবুত তাহারাতের পরিবর্তে প্রথমে ‘কিতাবুল আদব’ পড়ালেন।


হুজুরের এই চিন্তাধারা মতে, মুহাদ্দিসগণ পারষ্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে শুরু থেকে ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায় ভাগ করে নিয়ে পড়ালে ছাত্ররা আরো অনেক বেশি উপকৃত হবে। কেউ কিতাবুল ঈমান, কেউ কিতাবুত তাহারাত, কেউ কিতাবুল বুয়ু, কেউ কিতাবুল ফাযায়েল, আবার কেউ কিতাবুল জিহাদ, অন্য কেউ কিতাবুল ফিতান প্রথমে পড়ালেন এবং বাকী কিতাব পরে পড়ালেন। এতে করে ছাত্রদের মধ্যে হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে সম্যক ধারণা আসবে।


তাখাচ্চুছ ফি উলূমিল হাদীস


১৪০৩ হিজরী সালে সর্বপ্রথম তিনিই জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরে উচ্চতর হাদীস বিভাগ তথা ‘তাখাচ্চুছ ফিল হাদীস’ এর দুই বছর মিয়াদী কোর্স চালু করলেন। এটি ছিল নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম তাখাচ্চুছ ফিল হাদীস বিভাগ। পরবর্তীতে অনেক প্রতিষ্ঠান এই বিভাগ খুলেছে। এই বিভাগের সর্বপ্রথম ছাত্র ছিলেন জামিয়া বাবুনগরের সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আবুল কালাম রহ.। এর পর থেকে তিনি যত দিন জামিয়া বাবুনগরে ছিলেন এই বিভাগ চালু ছিল। বর্তমানেও চালু আছে। এই বিভাগে অধ্যয়নকারী ছাত্ররা তাঁর তত্ত্বাবধানে অনেক মূল্যবান থিসিস লিখেছেন। এগুলো প্রকাশ করা হলে ইসলামী লাইব্রেরীতে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে ইন শা আল্লাহ। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

১. ‘মানাকিবুল খুলাফায়ির রাশিদীন ফি দ্বাওয়ি আহাদীসি সাইয়িদুল মুরসালীন’ (আরবী) হাদীসের তাখরীজ সহ- মাওলানা আবুতাহের রামগড়ি। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৬১।

২. ‘সুজুদুত তাহিয়্যাহ ফি দ্বাওয়িল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ ওয়া আকওয়ালিল আইম্মাহ’ (আরবী) -মাওলানা নূরুল আলম রামুবী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৭।

৩. ‘আল মাহদিয়্যুল মুনতাজার ফি দ্বাওয়ি আহাদীসি খাইরিল বাশার’ (আরবী) -মাওলানা আব্দুল হাকীম খুলনা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৯।

৪. ‘মিন মানাকিবি উম্মাহাতিল মু’মিনীন ফি দ্বাওয়ি আহাদীসি সাইয়িদুল মুরসালীন’ (আরবী) হাদীসের তাখরীজ সহ- মাওলানা রফীকুল ইসলাম ফরীদপুরী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬১৬।

৫. ‘মাওকিফুল ইসলামি মিনাল খামরি’ (আরবী) হাদীসের তাখরীজ সহ- মাওলানা হেমায়াতুল্লাহ জশোরী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৮।

৬. ‘তাখরীজু আহাদীসিদ্দাজ্জাল’ (আরবী) হাদীসের তাখরীজ সহ- মাওলানা নূরুল হুদা নোয়াখালী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০০।

৭. ‘আল হাদীস হিফজুহু ওয়া তাদবীনুহু’। এটি অধমের ভাগ্যে জুটেছিল। এই লেখাটি পরে ‘হাদীসের হেফাজত ও সংকলন’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।

৮. ‘তারীখু তাদবীনুল হাদীস’ (বাংলা)। -মাওলানা ফাতহুন্নবী বগুরাবী।

৯. ‘আহসানুল আছাচ ফি হুকমি তালাকাতিস সালাস’ (আরবী) - মাওলানা মনতুর কুতুবী।

১০. ‘তাখরীজু আহাদীসি মুসনাদিল ইমামিল আজম’ (আরবী) - মাওলানা নূরুল আণম রামুবী।

১১. ‘প্রচণিত জাল হাদীস’ (বাংলা) -মাওলানা নাজমুল হক আজীমপুরী।

১২. ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ (বাংলা) - মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী।

১৩. ‘ফাতহুণ ওয়াদূদ বিরিজালি আবিদাউদ আল মুলতাকাত মিন বাজলিল মাজহুদ’ (আরবী) -মাওলানা নূরুল হুদা, নোয়াখালী।


লেখক : একান্ত ছাত্র আল্লাম বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহু।

মুহাদ্দিস : বাবুনগর মাদরাসা,চট্টগ্রাম।

Post a Comment

0 Comments